নিজস্ব প্রতিবেদক: চাউলের সুপ্রসিদ্ধ মোকাম হিসাবে খ্যাত কুষ্টিয়ার আইলচারা, বল্লভপুর ও খাজানগর। এ চাউলের চাহিদার কারণেই এখানে গড়ে উঠেছে অনেক অটো রাইচ মিল ও ধান চাতালের মিল। এসব মিল কলকারখানা স্থাপনে পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়মনীতি তোয়াক্কা করে গড়ে তুলেছে মিল কলকারখানা। অপরিকল্পিত ওইসব মিল কারখানার বর্জ্য, ধুলো ময়লা, তুষ ছাই উড়ে আবাসিক ঘরবাড়িতে পড়ে,এতে একদিকে যেমন এলাকার পরিবেশ দারুণভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। অপরদিকে ছাইয়ের স্তূপের উপর অনিয়মতান্ত্রিকভাবে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করে মিল-কলকারখানা গড়ে তোলায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। মিলের শ্রমিক-কর্মচারীরা আহত ও নিহতের ঘটনা ঘটছে। এরই প্রতিবাদে ও পরিবেশ দূষণরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবীতে এলাকাবাসী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলও করে কিন্তু কারো নজরে আনতে পারেনি। তাই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা মিল কল-কারখানায় কারণে জনদুর্ভোগ ও শ্রমিক কর্মচারীদের জান মালের নিরাপত্তা বিধানে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এলাকাবাসী।
জানা যায়, চাল উৎপাদনের বৃহৎ শিল্পনগরী কুষ্টিয়ার আইলচারা, বল্লভপুর খাজানগর। এখানে প্রায় ৪০/৫০টি বৃহৎ এগ্রো ফুড প্রোডাক্ট অটো রাইচ মিলসহ ছোট-বড় প্রায় ৮০০ রাইসমিল গড়ে উঠেছে। পাশাপাশি ধান সিদ্ধ-শুকানোসহ নানা প্রক্রিয়ার জন্য চাতালও রয়েছে দুই সহস্রাধিক। সেখানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় আট হাজার টন চাল উৎপাদিত হয়। এখানকার উৎপাদিত চাউলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় সারা দেশসহ দেশের বাইরে রপ্তানী করা হয়।
চালের চাহিদা দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় মিল মালিকরা ও ব্যবসায়ীরা চাল উৎপাদনে যেমন আগ্রহী হয়ে উঠেছে তেমনি দিন দিন বেড়েই চলেছে অটো রাইচ মিলের সংখ্যা। কিন্তু অটো রাইচ মিল বাড়লেও তা নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে না। অটো রাইচ মিলগুলোতে নির্দিষ্ট পরিমাণ উঁচু চিমনী থাকার কথা থাকলেও বেশির ভাগ মিলে চিমনী নেই। চিমনী না থাকায় মিলের ছাই ময়লা উড়ে আশেপাশের বাড়িঘর যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি পথচারীদের চোখে মুখে পড়ে মানুষের অমূল্য সম্পদ চোখ নষ্ট হচ্ছে। চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে এখানকার মানুষ। খাজানগরও বল্লভপুর মোড়ের মিলের আশেপাশের কয়েকটি পরিবারের লোকজন অভিযোগ করেন মিলের ধোঁয়া, ছাই উড়ে তাদের বসবাসের উপযোগী আর নেই। আবাসিক এলাকার মধ্যে এসব মিল গড়ে উঠায় সব সময় ছাই উড়ে তাদের ঘরবাড়ি অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে টিনের ঘর বসতবাড়িসহ গাছপালা। এতে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এসব ধোঁয়া ও ছাইয়ের কারণে ওই সকল পরিবারগুলোতে চোখের রোগ, এ্যাজমাসহ অসুখ-বিসুখ যাচ্ছে না।
সুত্রমতে, মিলের ধোঁয়া ও ছাই উড়া বন্ধে নির্দিষ্ট পরিমাণ উঁচু চিমনী ব্যবহার। মিলের নিচের দিকে হাওয়ার সাহায্যে একস্থানে স্তূপ করা যায়। কিন্তু এটি তৈরি করতে বাড়তি ব্যয় হওয়ায় মিল মালিকরা এটি স্থাপন না করায় মিলে ছাই উড়ে পরিবেশ দূষিত হয়। চাতালগুলোতেও জ্বালানী তুষ ব্যবহারের জন্য চিমনী তৈরি করলে এসব ছাই বাইরে উড়ে পড়ে না বলে অনেক মিলাররাও জানায়। কিন্তু বল্লভপুর, আইলচারা, খাজানগরে নিয়মতান্ত্রিকভাবে মিল গড়ে না উঠায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এলাকাবাসী।
এছাড়াও অপরিকল্পিতভাবে ছাইয়ের গাদার উপর বিল্ডিং স্থাপন করায় দেয়াল ধ্বসে মানুষের জানমালের চরম ক্ষতি হচ্ছে। কয়েক বছরে মারা গেছে বেশ কয়েকজন। ছাইয়ের স্তূপের উপর পাকা স্থাপনা গড়ে তোলায় প্রায়ই এ ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে মিল শ্রমিক কর্মচারীরা।
মিলের শ্রমিক কর্মচারীদের নির্দিষ্ট পোশাক ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও খাজানগর আইলচারার কোন মিলের শ্রমিক কর্মচারীদের পোষাক ব্যবহার করানো হয়না। ফলে মিলে ধূলা-ময়লা, ধোয়া সহজেই শ্রমিক কর্মচারীদের দেহে প্রবেশ করে। এতে শ্রমিক কর্মচারীরা এ্যাজমা রোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অচিরেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিম্ন আয়ের এসব শ্রমিক কর্মচারীরা। পুরুষের তুলনায় নারীদের মজুরীতে বৈষম্য থাকলেও চাতালগুলোতেও নারীরা হাড় ভাঙা পরিশ্রম করে রাত-যাপনের জন্য আবাসন না থাকায় মিলের ধুলো ময়লার মধ্যে রাত কাটানোর কারণে তারাও বিভিন্ন রোগে ভুগছে। ফলে এরই প্রতিবাদে ও পরিকল্পিতভাবে মিল গড়ে তোলার দাবীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে এলাকার লোকজন।
তাদের দাবী মিলগুলোতে নিয়মতান্ত্রিকভাবে চিমনি ব্যবহারসহ কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করে ছাই উড়া বন্ধ করতে হবে। শ্রমিক কর্মচারীদের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে নিয়ম অনুযায়ী পাকা স্থাপনা গড়ে তুলে কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবী শ্রমিকদের। এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট শ্রম বিভাগ ও পরিবেশ বিভাগ থাকলেও তাদের কোন তদারকী নেই এখানে। ফলে কুষ্টিয়ার খাজানগর আইলচারার মিল মালিকরা তাদের ইচ্ছেমত মিলগুলো স্থাপন ও পরিচালনা করছেন। এতে জনসাধারণ দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ দেশের বৃহত্তম চালের মোকামে তদারকী করলে একদিকে অত্র এলাকায় চালের বাজার যেমন উন্নত হবে অন্যদিকে জনসাধারণ ও শ্রমিক কর্মচারীদের জানমালের নিরাপত্তা হবে এমনটাই মন্তব্য করেন সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ।
বার্তা বিভাগ : মোবাইল- ০১৭১০-৭২২৮৮৪, ই-মেইল: dailyanusandhanpratidin@gmail.com