আম খেতে ভালোবাসেন না, এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া কঠিন। রসালো এই ফল স্বাদ, ঘ্রাণ ও পুষ্টিগুণ—সব দিক থেকেই এগিয়ে আছে। তবে লক্ষ করবেন, পাকা আম খাওয়ার পর শরীরে হালকা ঝিমুনি ভাব আসে বা ঘুম ঘুম অনুভব হয়। আম খাওয়ার পর কেন এমন হয়, এ নিয়ে মানুষের মধ্যে অনেক সময় ভুল ধারণা কাজ করে। আম খেলে কি আসলেই ঘুম আসে?
পাকা আমে আছে প্রচুর পরিমাণে ট্রিপটোফ্যান নামের অ্যামিনো অ্যাসিডের উপস্থিতি, যা ঘুম আসতে সাহায্য করে—এমনটাই বললেন ধানমন্ডির গ্যাস্ট্রোলিভার কেয়ারের বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদ ইসরাত জাহান। কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ভিটামিন, মিনারেলসমৃদ্ধ আম শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়ায়। এই ইনসুলিন ট্রিপটোফ্যান নিঃসরণ করে মস্তিষ্কে পাঠায়। ট্রিপটোফ্যান সহজেই যেহেতু মস্তিষ্কে প্রবেশ করতে পারে, সেখান থেকে তৈরি সেরোটোনিন ক্ষরণে সহায়তা করে।
আর সেরোটোনিন হচ্ছে ঘুমের জন্য দায়ী একটি নিউরোট্রান্সমিটার। সেরোটোনিনের উপস্থিতি মন ভালো রাখে, মস্তিষ্ক শীতল করে। বেশি পরিমাণ ইনসুলিন নিঃসরণের কারণ হলো আমে বিদ্যমান কার্বোহাইড্রেট বা গ্লুকোজ। যত বেশি আম খাওয়া হবে, ইনসুলিনের পরিমাণ তত বৃদ্ধি পেয়ে সেরাটোনিনও বাড়তে থাকবে। এ কারণেই আম খেলে ঘুম আসে।
সেরাটোনিন ক্ষরণ আরেক হরমোন মেলাটোনিনকেও ত্বরান্বিত করে। মেলাটোনিন হরমোন দেহের ঘুমের চক্রকে প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখে। এই দুই হরমোন ঘুমের সঙ্গে জড়িত। এদের কারণেই মস্তিষ্ক শীতল ও শান্ত হয়ে প্রশান্তিদায়ক অনুভূতি দেয়। ফলে ধীরে ধীরে তন্দ্রা ভাব আসে।
এ ছাড়া পাকা আমে থাকে ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি১২, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম ও মিনারেলস। ম্যাগনেশিয়াম স্নায়ু উত্তেজনা হ্রাস করে এবং পেশি শিথিল করে। পটাশিয়ামও প্রাকৃতিক পেশি শিথিলকারী হিসেবে পরিচিত। আর এতে আম খেলে শরীরে একধরনের প্রশান্তি ভাব আসে। আরামবোধ হওয়ার কারণে অনেকেরই ঘুম চলে আসে।
তাই যাঁদের সাধারণত রাতে দেরিতে ঘুম আসে কিংবা একেবারেই ঘুম আসে না, তাঁরা আম খেতে পারেন। তবে অবশ্যই যাঁদের ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে, তাঁরা খাবারের সঙ্গে সঙ্গে আম না খেয়ে দ্বিতীয় ধাপের কোনো মিল হিসেবে আম খেলে বেশি উপকার পাবেন। পাকা আমে যেহেতু প্রচুর ভিটামিন এ এবং চিনি বিদ্যমান, তাই দেহে ক্যালরি বাড়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়।
এ জন্য এই পুষ্টিবিদ আম পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করার পরামর্শ দেন এবং আম খেয়েই সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়ার কথা বলেন। আম খাওয়ার পর কিছুটা সময় হাঁটাহাঁটি বা অন্য কাজ করুন। এতে আম খেয়ে ঘুম এলেও মোটা হওয়ার সম্ভাবনা কমবে।