বাংলাদেশে সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো কোনো নেতা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। এরই মধ্যে গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া এই প্লাটফরমের রংপুরের এক নেতার এক লাখ টাকা চাঁদা দাবির ভিডিও এবং অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হয়েছে। এ নিয়ে থানায় অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে।
রংপুরের হাজির হাট এলাকায় গ্রীন সিটি ইকো পার্ক নির্মাণ প্রকল্পের এক কর্মকর্তার কাছে এক লাখ টাকা দর-কষাকষির ভিডিও ফাঁস হওয়ার পর অভিযুক্ত নাহিদ হাসান খন্দকারকে সংগঠনের পক্ষ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেয়া হয়েছে।
এরই মধ্যে গতকাল রোববার চাঁদা দাবির বিষয়ে রংপুর থানায় অভিযোগ করা হয়েছে এবং প্রাথমিক অনুসন্ধানও শুরু করেছে পুলিশ।
রংপুরের পুলিশ সুপার মো. আবু সাইম জানান, চাঁদাবাজির বিষয়ে অভিযোগটি করেছেন ইকো পার্ক নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার আতিকুল ইসলাম।
"আমরা একটা অভিযোগ পেয়েছি থানায়। ওইটার আজকে আমরা প্রিলিমিনারি ইনকোয়ারি করতেছি। ইনকোয়ারি করে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব" বলেন পুলিশ সুপার।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবির যে ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে, সেটির কথা উল্লেখ করে পুলিশ সুপার মি. সাইম বলেন, ওই অভিযোগে তার কাছ থেকে টাকা চাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে চাঁদা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত নাহিদ হাসান খন্দকার।
তিনি বলেন, "বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগর কমিটির কাছে আজহারুল ইসলাম তার জমি দখলের অভিযোগ দিয়েছিল। তার জায়গা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছিল। মহানগর কমিটি থেকেই অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে পাঠানো হইছে।"
দুইজন যুগ্ম আহ্বায়ক এবং মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহম্মদ বিষয়টি জানতেন বলে দাবি করেন মি. খন্দকার।
তবে, রংপুরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগর কমিটির আহ্বায়ক মি. আহম্মদ এ বিষয় অস্বীকার করেছেন।
এর আগে, কুষ্টিয়ার কুমারখালিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সমন্বয়কের বাবার বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে।
একইসঙ্গে ওই সমন্বয়কের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগও উঠেছে জামায়াতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে।
কুষ্টিয়ার সমন্বয়ক আসাদুজ্জামান আলী বলেন, "বাবার সঙ্গে একটা রাজনৈতিক বিরোধ ছিলো, মত ভিন্নতা ছিল। জামায়াতের নায়েবের আমিরের সঙ্গে একটু বাকবিতণ্ডা হয় আমার বাবার। বাবার বেশ কিছু অন্যায়- অনিয়ম আমরাও শুনতে পেয়েছি। তাদের একটা রাজনৈতিক ঝামেলার কারণে তারা আমার বাসার উপরে হামলা চালাইছে।"
দেশের বিভিন্ন স্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ওঠা চাঁদাবাজির এসব অভিযোগকে উদ্বেগের বিষয় বলে অভিহিত করেছেন দুর্নীতিবিরোধী বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি মনে করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য থেকে বাস্তবতার খাতিরে প্রত্যাশিতভাবেই একপর্যায়ে রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ ঘটেছে। কিন্তু রাজনীতির মূল ধারার যে রোল মডেল সেটি অনুসরণ করছে তারা।
পাঁচই অগাস্ট থেকে সারা দেশে দলবাজি, চাঁদাবাজি, মামলা বাণিজ্য, দখল ব্যাপকভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে বলে মন্তব্য করেন ইফতেখারুজ্জামান।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, " প্রথাগত রাজনৈতিক শক্তির হাতে এসব ঘটেছে। অর্থাৎ রাজনীতি করতে গেলে চাঁদাবাজি, দখলবাজি ইত্যাদি করতে হবে, এটাই কিন্তু রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটা থেকে মূল ধারার রাজনৈতিক শক্তি বেরিয়ে আসতে পারে নাই। এরই প্রেক্ষিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটি বা নতুন রাজনৈতিক দল, তারা ওই জায়গা অনুসরণ করা শুরু করেছে।"
ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন জাতির প্রত্যাশা পূরণের জন্যই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এ ধারা এখনই পরিহার করা অপরিহার্য।
ফলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বা জাতীয় নাগরিক কমিটির কোনো কোনো নেতার এ পথে যাওয়ার দায় মূল ধারার রাজনৈতিক মডেলের বলেও মনে করেন তিনি।
" আমি মনে করি অবশ্যই আমাদের মূল ধারার রাজনৈতিক শক্তিগুলোর এটার মূল দায়। এটা তাদের মেনে নিতে হবে" বলেন ইফতেখারুজ্জামান।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: এমদাদুল হক
মোবাইল : ০১৭৬০-২১২১৯২
নিউ মার্কেট বাজার (বঙ্গবন্ধু সুপার মার্কেটের পেছনে) ২ তলা,এন.এস.রোড কুষ্টিয়া।
ই-মেইল: emdadulmilon1992@gmail.com
ই-পেপার কপি