কুষ্টিয়ায় জমির দালাল থেকে রাজনৈতিক ছায়ায় কয়েক বছরের ব্যবধানে শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন সৃজন প্রোপার্টিজের খোকন। তার মালিকানাধীন বিভিন্ন বহুতল ভবনে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) ও পৌরসভার নিয়ম ভঙ্গ করে ভয়াবহ অনিয়মে নির্মাণ কাজ চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, কুষ্টিয়া শহরের গোসালা রোডে জমির দালালি দিয়েই খোকনের ব্যবসায়িক যাত্রা শুরু। ২০০৫-০৬ সালে কয়েকজনের সঙ্গে জমি কেনাবেচার মাধ্যমে তিনি দালালিতে নামেন। পরে রোজ ও লিটনের সঙ্গে অংশীদারিত্বে ডেভেলপার ব্যবসা শুরু করলেও দুর্নীতি ও মতবিরোধের কারণে সেই পার্টনারশিপ ভেঙে যায়।
২০১৮ সালের দিকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ও তার ভাই আতার ছায়ায় এসে এককভাবে ব্যবসা শুরু করেন খোকন। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি অল্প সময়েই বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়ে ওঠেন। কুষ্টিয়ার রাজনৈতিক কর্মসূচি ও খেলাধুলার নানা আয়োজনে নিয়মিত অর্থায়নও করেছেন তিনি।
সৃজন প্রোপার্টিজ এর নির্মিত ‘জাকের টাওয়ার’-এ ভয়াবহ অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভবনটির প্রথম তলার ছাদ ঢালাইয়ের সময় যথাযথ র্যাম ব্যবহার করা হয়নি। গাড়ির গ্যারেজে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় রাতের আঁধারে ছাদ কেটে ফেলা হয়েছে। এমনকি ভাড়া দেওয়া শোরুমের বিমও কেটে ফেলা হয়েছে, যা ঘটেছে কোনো প্রকৌশলীর অনুমোদিত নকশা বা পৌরসভার অনুমতি ছাড়াই।
এছাড়াও নির্মাণাধীন ‘হামিদা টাওয়ার’সহ খোকনের অন্যান্য প্রকল্পেও একই ধরনের অনিয়ম চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন থেকে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
জাকের টাওয়ারের প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ এ বিষয়ে বলেন, “এটি অনেক আগের ঘটনা। আমি মালিক খোকনের সঙ্গে কথা বলে জানাব।” তবে পরে আর কোনো মন্তব্য দেননি তিনি।
কুষ্টিয়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ওয়াহিদুর রহমান বলেন, “এখন পর্যন্ত লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে খোকন দালাল থেকে কোটিপতি হয়েছেন। তবে তার অনিয়মতান্ত্রিকভাবে গড়ে ওঠা বহুতল ভবনগুলো শহরের মানুষের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে।